স্বদেশ ডেস্ক:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের পোস্টারের বিষয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিছু জানেন না দাবি করলেও বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের তীর উঠেছে তাদের দিকেই।
ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান একাধিক নেতার দাবি, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া এমন পোস্টার হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টারের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সবার সমালোচনার মুখেই পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি পরে অস্বীকার করেছেন শোভন-রাব্বানি।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে অন্যান্যবার আলোচনাসভা, রক্তাদান কর্মসূচির মতো কর্মসূচি পালন করলেও এবার ইসলামিক জলসা করার ঘোষণা আসে ছাত্রলীগের নাম উল্লিখিত একটি পোস্টারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের উদ্যোগে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের পোস্টার তৈরি করে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়।
ওই পোস্টারে বলা হয়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পবিত্র কোরআন খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পোস্টারের নিচে লেখা আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সঞ্চালনা করবেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
প্রধান অতিথি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। কোরআন তেলাওয়াত করবেন বিশ্বজয়ী হাফেজ ও কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহিদ বিন আলী লাহোরি, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনি, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তকী ও তারেক জামিল। হামদ-নাত পরিবেশন করবেন জাগ্রত কবি মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজী আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান ও ইশতিয়াক আহমাদ।
অনুষ্ঠানের পোস্টার ও কথিত কবি মুহিব খানসহ আওয়ামী লীগবিরোধী অনেক বক্তাকে দেখে ক্ষুব্ধ অনেক অতিথিও। জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিদ্বেষী অনেক কবিতা ও গান রয়েছে মুহিব খানের। তিনি বাংলাদেশ, দেশের পতাকা, এমনকি জাতীয় সংগীত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়েও নানা সময়ে সমালোচনা করে নানা রকম ইসলামি গান রচনা করেছেন। এই পোস্টারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থেকে শুরু করে ফেসবুকে বিভিন্নজনের টাইমলাইন, গ্রুপ ও পেজে ছেয়ে যায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পোস্টারে সব সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার হলেও ওই পোস্টারে তাদের ছবি ছিল না। কোনো ছবি ব্যবহার না করে পোস্টারের রঙ দেওয়া হয়েছে ছাত্রশিবির ও খেলাফত মজলিশের মতো মৌলবাদী সংগঠনের করা পোস্টার বা ব্যানারের মতো।
সমালোচনার পর সোমবার রাতে ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই পোস্টার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সস্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউই ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টার সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। ওই পোস্টার প্রকাশনা ও প্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অস্বীকার করলেও অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসানের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ আবদুল্লাহর কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিয়েই অতিথি তালিকা ও পোস্টার বানানো হয়েছে বলে মাহমুদকে দাবি করতে শোনা যায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ছবি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপসম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন তার ফেসবুকে লিখেন, ‘কেউ জানেন না অথচ মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু, কার্জন হল, টিএসসি, হলগুলোয় শিবিরের কর্মীরা এসে পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছে?? আপনারা কার *** ছিঁড়েন?? এইসব নাটক, মিথ্যাচার বাদ দিয়ে সারা বাংলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিকট মাফ চান। দয়া করে ভবিষ্যতে নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রলীগকর্মীদের আদর্শিক ও আবেগের জায়গাগুলোতে আর আঘাত করবেন না।’
ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন তার ফেসবুকে লেখেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সময় জিয়ার ছবিসংবলিত পোস্টার মধুতে দেখেই ছিঁড়ে ফেলা ও আগুন লাগানো হয়। হিজবুত তাহরীরের লিফলেট পোস্টার দেখলে ছিঁড়ে ফেলা হয়, সামনে পেলে দৌড়ানি দেওয়া হয়। অথচ এই পোস্টার আজ সকাল থেকে মধুসহ বিভিন্ন হলের গেটে লাগানো। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না, পোস্টার উচ্ছেদও করা হলো না। বড় বড় নেতা সবাই যার যার ওয়ালেও এই পোস্টার আপলোড দিল। অথচ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাত ১১টায় বলা হচ্ছে, এটা ছাত্রলীগের পোস্টার নয়।
যদি এটা ছাত্রলীগের পোস্টার না হয়, তাহলে দিন থেকে রাত, হল থেকে মধু, মধু থেকে ঢাকা শহরে কীভাবে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে? একজনও কি এই পোস্টার দেখেননি কিংবা একটা কর্মীও কি দেখেননি? এটা ছাত্রলীগের পোস্টার না হলে তৎক্ষণাৎ কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত না। এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভূগোল বুঝিয়ে লাভ নেই। সবাই জানে এই পোস্টার কারা করেছে। ভুল স্বীকার করার মধ্যেই মহত্ত্ব রয়েছে, ভুলের পক্ষ নিয়ে আবার বিতর্ক না বাড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’
অভিযোগের বিষয়ে তাদের মন্তব্য জানার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাদের নাম্বারে এসএমএস করলেও উত্তর দেননি তারা।